1. abrajib1980@gmail.com : মো: আবুল বাশার রাজীব : মো: আবুল বাশার রাজীব
  2. abrajib1980@yahoo.com : মো: আবুল বাশার : মো: আবুল বাশার
  3. farhana.boby87@icloud.com : Farhana Boby : Farhana Boby
  4. mdforhad121212@yahoo.com : মোহাম্মদ ফরহাদ : মোহাম্মদ ফরহাদ
  5. shanto.hasan000@gmail.com : Rakibul Hasan Shanto : Rakibul Hasan Shanto
  6. masum.shikder@icloud.com : Masum Shikder : Masum Shikder
  7. shikder81@gmail.com : Masum shikder : Masum Shikder
  8. riyadabc@gmail.com : Muhibul Haque :

আমার হাত দুটি ধরে তুমি নিয়ে চলো সখা : পর্ব ২

  • Update Time : শুক্রবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০২০
  • ৩৯৪ Time View

উপমন্যু রায়

‌আমার সেই তোমাকে লুকিয়ে দেখার ব্যাপারটা তুমিও হয়তো জানতে। আর জানতে বলেই একদিন একটা দুঃসাহসিক ঘটনা ঘটিয়ে ফেলেছিলে। অবশ্য আমার কাছে সেটা দুঃসাহসিক হলেও তোমার কাছে ছিল তা নেহাতই মজার একটি ঘটনা মাত্র। আজ পরিষ্কার বুঝতে পারি সেটা।‌‌

অফ পিরিয়ডে আড্ডা মারছিলাম ক্যাম্পাসে। আমরা, মানে সেখানে তখন ছিলাম আমরা ছ’জনই। আর কেউ ছিল না। সকলেই নানা রকম কথা বলাবলি করছিলাম। হঠাৎই তুমি সরাসরি আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিলে, ‘‘তুই লুকিয়ে আমাকে দেখিস কেন?’’
আমি খুব অস্বস্তিতে পড়ে গিয়েছিলাম তোমার কথায়। তার মানে আমার লুকিয়ে দেখার ব্যাপারটা তুমি বুঝতে পেরে গিয়েছিলে। রীতিমতো ভীত কণ্ঠে তখন আমি বলেছিলাম, ‘‘কে বলল? —ধ্যেৎ!’’
বলতে দ্বিধা নেই, তোমার সেই কথায় একটু ভয়ই পেয়ে গিয়েছিলাম। কী জানি কী থেকে কী হয়ে যায়! তোমার কাছ থেকে কথাটা যদি এবার গোটা ইউনিভার্সিটিতে ছড়িয়ে যায়, তা হলে তার পরিণতি কী হবে ভেবে একটু ভড়কে গিয়েছিলাম। বন্ধুবান্ধবরা সবাই তো আমার পেছনে পড়ে যাবে।

তুমি আমার কাছে এগিয়ে এসেছিলে। আমার চোখে চোখ রেখে সিরিয়াস গলায় বলেছিলে, ‘‘কে বলল? কে বলল, তাই না? —আমি নিজে দেখেছি।’’
ভয়ার্ত চোখে তোমার দিকে তাকিয়েছিলাম। হ্যঁা, সরাসরি। সেই প্রথম।
হঠাৎ কী হল তোমার কে জানে, তুমি আমার মুখটা চেপে ধরে তীব্র এক চুমুতে আমার ঠোঁট দুটো কামড়ে ধরলে। সেটাও কয়েক মুহূর্তের ব্যাপার ছিল। তার পর আমাকে ছেড়ে দিয়ে বলেছিলে, ‘‘পুরুষ হয়েছিস কেন? লজ্জা করে না লুকিয়ে লুকিয়ে মেয়েদের দেখতে? কাপুরুষ কোথাকার!’’

ঘটনার আকস্মিকতায় আমি তখন বিমূঢ়। কোনও কথা আসেনি আমার মুখে। ব্যাপারটা আমার সব কিছু ঘুলিয়ে দিল। ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়েছিলাম তোমার দিকে। ‘কাপুরুষ’ বলে কিনা জানি না!
ঘটনাটা স্তম্ভিত করে দিয়েছিল অন্য বন্ধুদেরও। তারাও রীতিমতো চমকে গিয়েছিল। কিছুক্ষণ পরে যেন সকলের ঘোর ভাঙে। একটি মেয়ে, তার নাম আস্থা, তখন বলেছিল, ‘‘এই অনসূয়া, কী করছিস? বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে!’’

তুমি বলেছিলে, ‘‘করছি না, করেছি। পাস্ট টেন্স।’’ একটু থেমে সকলকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছিলে, ‘‘এ–সব আমাদের মধ্যে ঘটনা। বাইরে যেন পাঁচ কান না হয়!’’ তবে কত সহজেই না তুমি কথাগুলি বলেছিলে! আজ ভাবলে অবাক লাগে।
পাঁচ কান হয়নি। সবাই কথা রেখেছিল। তবে তোমার সাহসিকতা আমার রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছিল। বেশ কিছুদিন বিভ্রান্ত হয়ে বাড়িতে বসেছিলাম। ইউনিভার্সিটি যাইনি।

তবে, সেটাই ছিল আমার প্রথম চুমু খাওয়া। ভুল বললাম। আমাকে কেউ চুমু খেল সেই প্রথম। এর আগে চুমু খেতে কেমন লাগে, চুমুর স্বাদ কী, জানতাম না। সেই প্রথম জানলাম। বলা বাহুল্য, ভালো লাগেনি।
অবশ্য কিছুদিনের মধ্যেই সেই অনুভূতি কাটিয়ে উঠেছিলাম। ফের মন দিয়েছিলাম লেখাপড়ায়। এ ছাড়া আমার অন্য কোনও উপায়ও ছিল না। নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে আমি। কোনও এক মুহূর্তের খেয়ালে একটি সুন্দরী মেয়ে আমাকে চুমু খেয়ে নিজের সাহসিকতার পরিচয় দিলেও আমি তাতে ভেসে যাইনি। ভেসে গেলে আমার কাছে তা এক প্রকার বিলাসিতাই হত।
লেখাপড়া করে একটা চাকরি আমার দরকার ছিল। দরকার ছিল আমাদের পরিবারের জন্য। বাবা একা পাঁচজনের সংসার আর টানতে পারছিলেন না। মা মাঝেমাঝেই আমাকে বলতেন, ‘‘তোর বাবার কিন্তু বয়স বাড়ছে! কথাটা একটু মনে রাখিস।’’ মা অনেক আক্ষেপ করেই কথাগুলি বলতেন।

অর্থাৎ, আমাকে কিছু একটা করতে হবে। কিন্তু, কী করতে পারি আমি? আবার এ কথাও সত্য, বয়স কারও থেমে থাকে না। বাবার যে বয়স বাড়ছে, তা আমি তাঁকে দেখে বুঝতে পারতাম। তাঁর অবসরের সময় হয়ে আসতে খুব বেশি দেরি ছিল না। তাই পড়াশোনায় ফাঁকি দেওয়ার স্পর্ধা দেখানোর অর্থ আমাদের পরিবারকে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দেওয়া।
কিন্তু দর্শন নিয়ে পড়ে কী চাকরি পেতে পারি আমি? উচ্চমাধ্যমিক স্তরে শিক্ষকতা। আবার, সাধারণ স্নাতক হিসেবে সরকারি চাকরির পরীক্ষা দেওয়া যেতে পারে। এ ছাড়া আর পথ কী?
তবে সে–সব নিয়ে তখন খুব বেশি ভাবিত ছিলাম না। তখন অনেক আকাশকুসুমও ভাবতাম। স্বপ্ন দেখতাম অনেক।
জানো অনসূয়া, ভাবতাম আমি বড় কোনও দার্শনিক হব। সক্রেটিস হব। সক্রেটিসের কাহিনি আমাকে ছোট থেকেই মুগ্ধ করত। হেমলক দিয়ে তাঁকে মেরে ফেলার কাহিনি আমাকে খুব কষ্ট দিত। স্বপ্ন দেখতাম এই অবক্ষয়ের সময়েও।
কিন্তু আজ? কোথায় সক্রেটিস হওয়ার স্বপ্ন? আর কোথায় আমি!‌‌

পড়ায় মন দিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই দিনগুলি কাটছিল। পড়া ও পড়ার বাইরে আমাদের ছয় বন্ধুর যোগাযোগ ছিল ঘনিষ্ঠ। তবে তোমার যেন পড়ার বাইরের জীবনের দিকে একটু বেশিই আগ্রহ ছিল। আমরা তা জানতাম। সেই বিষয়টা বাদ দিয়ে আমাদের ছ’জনের মধ্যে বোঝাপড়া ছিল খুবই ভালো। একে অন্যের নানা অসুবিধেয় সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতাম। পাশে দাঁড়াতাম।
তার পর একটি চমৎকার একটা ঘটনা ঘটল। অফ পিরিয়ডে আমরা ছ’জন ক্যাম্পাসের একদিকে বসে আড্ডায় ব্যস্ত ছিলাম। কথায় কথায় এক সময় আস্থা বলল, ‘‘শোন, তোদের আজ আমার একটা কথা বলার আছে।’’
স্বভাবতই আমরা সকলে তার দিকে জিজ্ঞাসার চোখে তাকাই। আস্থা কিন্তু মিটিমিটি হাসতে থাকে। তার ওই হাসি দেখে বিরক্ত হলে তুমি। বললে, ‘‘কী বলার আছে তাড়াতাড়ি বল। তার পর যত খুশি হাসিস!’’
আস্থা হাসিমুখে বলে, ‘‘আহা, চটে যাচ্ছিস কেন? তোদের ভালোর জন্যই তো বলছি!’’
আমি হেসে বলি, ‘‘বল না! আমাদের যখন ভালোই করতে চাইছিস, সেটা একটু তাড়াতাড়ি করে ফেললে ভালো হয় না? তাই এবার বলে ফেল।’’
আমাকে সমর্থন করে শম্পা। মানে, আমাদের গ্রুপের অন্য এক বন্ধু। বলে, ‘‘ও ঠিকই বলেছে। আর দেরি না করে এবার দয়া করে কী ভালোটা করতে চাস, করে ফেল তো দেখি!’’
আস্থা বলে, ‘‘আমি একটা জিনিস পেয়েছি।’’অদ্ভুত এক রহস্যময় হাসি ফুটে ওঠে তার মুখে।
আমাদেরই আর এক বন্ধু রঞ্জন বলে, ‘‘জিনিস! —কী সেটা?’’
আস্থা বলে, ‘‘উঁহু, সেটা এখন বলছি না।’’
শম্পা বিরক্ত হয়। জিজ্ঞাসা করে, ‘‘তা হলে কখন বলবি?’’
আস্থা তার প্রশ্নের সরাসরি জবাব দেয় না। বলে, ‘‘জিনিসটার মালিক আমাদের মধ্যে দু’জন।’’
— ‘‘মানে?’’ আস্থার কথায় তুমি ভয়ানক রেগে গেলে।
আস্থা গুরুত্ব দেয় না তোমাকে। নিজের কথার রেশ ধরেই বলে, ‘‘তবে তা আপাত দৃষ্টিতে।’’‌
রিমি, মানে আমাদের আরেক বন্ধু বলে, ‘‘হেঁয়ালি রেখে আসল কথাটা বল।’’
বুঝতে পারি, আমরা সকলেই একটা চাপা উত্তেজনার মধ্যে পড়ে গিয়েছি। আমি অনুরোধ করি, ‘‘এই আস্থা, বল না কী পেয়েছিস?’’
আস্থা একই ভাবে মাথা দুলিয়ে বলে, ‘‘জিনিসটার শেষ অধিকার অবশ্য একজনের।’’
ব্যাপারটা সত্যিই বুঝতে পারি না আমরা কেউই। রঞ্জন চোখ গোল গোল করে তাকিয়ে থাকে আস্থার দিকে। শম্পা বলে, ‘‘আস্থা, এটা কিন্তু ঠিক হচ্ছে না!’’
তুমি ভুরু কুঁচকে বললে, ‘‘ভানতারা রেখে সত্যি কথাটা বলবি কি? না হলে আমি চললাম।’’ উঠে দাঁড়ালে তুমি।
আমরা প্রায় সকলে একসঙ্গে আস্থাকে বলি, ‘‘প্লিজ, বল।’’
আস্থা বলে, ‘‘এত অধৈর্য কেন তোর অনসূয়া?’’ তাঁর কথায় একটু শ্লেষ মিশে ছিল যেন।
তুমি বললে, ‘‘তোর এই খেলাটা অসহ্য লাগছে আমার।’’
আস্থা বলে, ‘‘তাই!’’ একটু থেমে ফের বলে সে, ‘‘আচ্ছা, তা হলে শোন।’’
আমরা সকলে তাকিয়ে থাকি তার দিকে।‌‌ (‌ক্রমশ)‌

লেখক: উপমন্যু রায়

Please Share This Post in Your Social Media

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ দেখুন..